জানেন কি বন্ধু দিবস কিভাবে হলো.? Bondu Dibos ki babe holo?
বন্ধু দিবস কেন হলো? কিভাবে হলো সব জানুন........
সম্পাদক: কবি ও লেখক মোঃ ইমাম
ভূমিকা:
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজে টিকে থাকার জন্য যেমন আত্মীয়স্বজন, পরিবার ও প্রতিবেশীর প্রয়োজন, তেমনি একান্ত আবশ্যক একজন প্রকৃত বন্ধুর। বন্ধু এমন একজন, যার সঙ্গে আমরা সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে পারি, যার কাছে নিজের অনুভূতি নিঃসংকোচে প্রকাশ করতে পারি। এই বন্ধুত্বের গুরুত্বকে স্মরণ করেই প্রতিবছর পালিত হয় "বন্ধু দিবস" বা "Friendship Day"।
বন্ধু দিবসের সূচনা:
বন্ধু দিবসের সূচনা হয় ১৯৩০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। Joyce Hall নামের একজন ব্যক্তি সর্বপ্রথম এই দিনের প্রচলন করেন Hallmark Greeting Card Company–এর মাধ্যমে। যদিও শুরুতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এর প্রচলন হয়, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি একটি আবেগঘন, আন্তরিক ও বৈশ্বিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। ১৯৫৮ সালে প্যারাগুয়েতে "World Friendship Crusade" নামক একটি সংগঠন বন্ধু দিবসকে আন্তর্জাতিকভাবে পালনের প্রস্তাব রাখে। পরবর্তীতে ২০১১ সালে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে ৩০ জুলাইকে আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তবে ভারতের মতো কিছু দেশে এটি আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার পালন করা হয়।
বন্ধুত্বের সংজ্ঞা:
বন্ধুত্ব হলো এমন একটি সম্পর্ক যা আত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ। এটি রক্তের সম্পর্ক নয়, কিন্তু হৃদয়ের সম্পর্ক। বন্ধুত্বের ভিত্তি হলো পারস্পরিক আস্থা, সহানুভূতি, সহনশীলতা ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। প্রকৃত বন্ধু সেই, যে বিপদের দিনে পাশে দাঁড়ায়, নির্জনে সাহস জোগায়, আনন্দের মুহূর্তে আনন্দে শামিল হয়। বন্ধুত্ব বয়স, জাতি, ধর্ম কিংবা শ্রেণির সীমারেখা মানে না। শিশু, কিশোর, তরুণ কিংবা বৃদ্ধ—সব বয়সের মানুষের জীবনেই বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
বন্ধু দিবস পালনের গুরুত্
বন্ধু দিবস কোনো আনুষ্ঠানিক ছুটির দিন না হলেও এটি একটি আবেগময় উৎসব। এই দিনে মানুষ তার প্রিয় বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানায়, উপহার দেয়, সময় কাটায় এবং স্মৃতিচারণ করে। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জীবনের পথে চলতে গেলে শুধু আত্মীয় নয়, প্রয়োজন একজন বিশ্বাসযোগ্য বন্ধুর। যান্ত্রিক জীবনে বন্ধুত্বের গুরুত্ব আরও বেশি। একাকীত্ব, মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বন্ধুত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল হতে পারে।
বন্ধু দিবস পালনের নানা উপায়:
বন্ধু দিবস পালন করার অনেক রকম উপায় রয়েছে। কেউ বন্ধুকে একটি শুভেচ্ছা কার্ড পাঠায়, কেউ বা একটি ফোন করে খোঁজখবর নেয়। কেউ আবার ছোট কোনো উপহার দেয়, যেমন—বন্ধুত্বের ব্যান্ড, একটি বই বা প্রিয় কোনো সামগ্রী। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার প্রচলনও ব্যাপক। এই দিনে অনেক স্কুল, কলেজ বা সামাজিক সংগঠন বন্ধুত্ব বিষয়ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যেখানে গান, কবিতা, নাটক বা আলোচনার মাধ্যমে বন্ধুত্বের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
বন্ধুত্বের উপকারিতা:
১. মানসিক শান্তি: একজন ভালো বন্ধু জীবনের নানা কঠিন মুহূর্তে মানসিক সাহস জোগায়।
২. আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: বন্ধু আমাদের সক্ষমতা ও গুণাবলি সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।
৩. নেতিবাচকতা দূর করে: বন্ধু আমাদের ভুল সংশোধন করে, বিভ্রান্তি দূর করে, ইতিবাচক ভাবনায় উদ্বুদ্ধ করে।
৪. সুখ-দুঃখের সাথি: জীবনের সুখের মুহূর্তগুলো বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া আনন্দের মাত্রা দ্বিগুণ করে তোলে।
৫. সামাজিক উন্নয়ন: ভালো বন্ধুত্বের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সহযোগিতা, সহানুভূতি এবং সহনশীলতা বাড়ে, যা সমাজের জন্য ইতিবাচক।
বর্তমান যুগে বন্ধুত্ব:
আজকের প্রযুক্তিনির্ভর যুগে বন্ধুত্বের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। আগে বন্ধুত্ব ছিল চিঠি বা সরাসরি সাক্ষাতে গড়ে ওঠা সম্পর্ক, এখন তা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক দ্রুত তৈরি হয়। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম বন্ধুত্ব তৈরি ও রক্ষার একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে। তবে প্রযুক্তির এই সহজতা যেমন বন্ধুত্ব গঠনে সহায়ক, তেমনি এটি অনেক সময় কৃত্রিমতাও আনতে পারে। তাই বন্ধু নির্বাচনে সাবধান হওয়া এবং সম্পর্ক রক্ষায় আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন।
প্রকৃত বন্ধুর গুণাবলি:
বিশ্বস্ততা: একজন প্রকৃত বন্ধু কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করে না।
সহানুভূতি: সে বন্ধুদের দুঃখ-কষ্ট নিজের মতো অনুভব করে।
সহযোগিতা: যে কোন বিপদে বন্ধু পাশে দাঁড়ায়।
সততা: সত্য কথা বলার সাহস রাখে, এমনকি সেটা কঠিন হলেও।
উৎসাহ প্রদান: বন্ধুকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে।
বাংলা সাহিত্যে বন্ধুত্ব:
বাংলা সাহিত্যে বন্ধুত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ভট্টাচার্য প্রমুখ কবিদের রচনায় বন্ধুত্বের নানা দিক উঠে এসেছে। "আমার বন্ধু রাশি রাশি", "মনে রেখো বন্ধু" ইত্যাদি কবিতাগুলো বন্ধুত্বের অনুভূতির নিখুঁত প্রতিফলন। আবার নাটক ও উপন্যাসেও বন্ধুত্বকে কেন্দ্র করে নানা প্লট গড়ে উঠেছে।
উপসংহার:
বন্ধু দিবস কেবল একটি নির্দিষ্ট দিনে সীমাবদ্ধ নয়। প্রকৃত বন্ধুত্ব প্রতিদিনই উদযাপনযোগ্য। তবুও একটি দিন বিশেষভাবে বন্ধুত্বকে স্মরণ করা আমাদের মনোজগতে এক নতুন অনুভূতির জন্ম দেয়। এই দিনে আমাদের উচিত পুরোনো বন্ধুদের খোঁজ নেওয়া, ভুল বোঝাবুঝি দূর করা এবং নতুন করে সম্পর্ক মজবুত করা। বন্ধুত্ব যেন শুধু একটি দিনে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং প্রতিটি মুহূর্তে তা জীবনের অংশ হয়ে উঠুক।
Comments
Post a Comment